আপনার বর্তমান অবস্থা আল্লাহর ইচ্ছা মাত্র পর্ব- ২ (ফিরেএসো)

আপনার বর্তমান অবস্থা আল্লাহর ইচ্ছা মাত্র 

আপনার হৃদয় যতই বিমর্ষ হোক না কেন, কখনো আশা হারাবেন না। যতক্ষণ প্রয়োজন আল্লাহর কাছে কান্না করুন। কেবল তিনিই পারেন বিষাদের অশ্রুকে পরম আনন্দে বদলে দিতে। 

যখন আপনি পুরোপুরি মনোবলহীন, তখন একটি জিনিসই আপনাকে সারিয়ে তুলতে পারে, আর তা হচ্ছে: ইবাদতের মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি করা। কেবল তাঁরই কাছে রয়েছে উপশমের ক্ষমতা।

কখনো আশা ছেড়ে দেবেন না। একদিন সবকিছু  তার উপযুক্ত স্থানে পৌঁছাবেই। আপনি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, (একদিন ) সেদিকে ফিরে তাকাবেন এবং তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ দেবেন। 

আপনাকে পরাস্ত করার সুযোগ এই (পার্থিব) জীবনকে দেবেন না। আমাদের সকলেরই দুশ্চিন্তা ও বোঝা রয়েছে, কন্তিু আমরা নিজেদেরকে ভেঙ্গে পড়তে দিই না। কেননা, আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছেন। 

আপনি যাই চান না কেন, তা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে চান। দু’আর মাধ্যমে আপনার গোটা জীবন বদলে যেতে পারে। এটাই আপনার কাছে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। এটাকে ব্যবহার করুন। এটাকে বিফলে যেতে দেবেন না। এটা আপনার ভাগ্য বদলে দিতে পারে। আপনি যা চান, তা কেবল আল্লাহই দিতে পারেন। উপরন্তু এই চাওয়ার জন্যেও আপনি পুরস্কত হবেন। 

সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের জন্য যতগুলো দরজা খুলেন, ঠিক ততগুলো তিনি আবার বন্ধও করে দেন। তেমনটি যখন ঘটে, তখন “বিষয়টি বুঝলাম না” তথাপি হতাশ হচ্ছি না। কেননা, কোনটা আমার জন্য উওম, আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন। আমি তা অবশ্যই মেনে নিবো এবং আমি পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর ভরসা করি” -এমন দৃঢ়তার সাথে কথা বলার জন্য পরিপক্ক মনের প্রয়োজন হয়। 

সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের পক্ষে আছেন, এটা কখনো ভুলে যাবেন না। আমরা যদি তাঁর দিকে এক কদম ফেলি, তিনি আমাদের সাথে বহু কদম ফেলেন! হ্যাঁ, জীবন কঠিন এবং আমাদের সাথে বহু দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। প্রায়শই আমরা জানি না, কেন সেগুলো ঘটে। কিন্তু আল্লাহর উপর আস্থা রাখৃুন এবং জেনে রাখুন, তিনি আমাদের কল্যাণই চান। 

ভালো মন্দ বিচার করার আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিন

ভালো কি মন্দ, আপনি যেমনটি দেবেন, তেমনটিই ফেরত পাবেন। এধরনের বিষয় বিহিত করার দায়িত্ব নিহায়েৎ আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেন। তিনিই সর্বজ্ঞ, তিনিই ন্যায়বিচারক। 

সর্বশক্তিমান আল্লাহ যা করছেন, তিনি তা ভালো করেই জানেন। এ ব্যাপারে কখনো সন্দেহ করবেন না। স্বাভাবিকভাবেই আপনার সর্বোওম স্বার্থ তাঁর কাছেই রয়েছে। এটা তাঁর পরিকল্পনারই একটা অংশ। তাই তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা রাখূন। 

এই জীবনে যাই ঘটে, তার সবই পরীক্ষা। পরীক্ষাগুলো উতরে আনন্দের সাথে বাঁচুন। আপনার কি ব্যর্থ হওয়া উচিত? (অবশ্যই নয়)। কারণ, এটাই শেষ নয়। ওঠে দাঁড়ান এবং সামনে এগিয়ে যান। 

আগামীকাল কি হবে? আপনার কি পর্যাপ্ত অর্থ থাকেবে? আপনি কি বিবাহ করতে পারবেন? কিংবা আপনার কি সন্তান থাকবে? এগুলো কেউই জানে না। তাই আল্লাহর ওপর পূর্ণরূপে আস্থা রাখুন। প্রতিটি দিন আনন্দের সাথে বাঁচুন। 

(এই জগৎ সংসারে) পরীক্ষা ছাড়া কোনো জীবন নেই এবং ধৈর্য ছাড়া নেই কোনো সফলতা। তাই পরীক্ষা যত কঠিন হবে, আপনার এ ব্যাপারে ততই আশাবাদী হওয়া উচিত হবে যে, আল্লাহর সাহায্য ততই সন্নিকটে। 

চলার পথে যত পরীক্ষা আসে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনাকে সেগুলো মোকাবিলার শক্তি দিয়েছেন। তিনি আপনাকে এমন কিছু দেবেন না, যা আপনি সামলাতে সক্ষম নন। 

ভার ও বোঝার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে এবং (আল্লাহর) রহমত থেকে বঞ্চিত হতে শয়তান আপনাকে শুধু কুমন্ত্রণা (ওয়াসওয়াসা ) দিয়েই যাবে। সর্বশক্তিমান আল্লহই আপনাকে এতদূর নিয়ে এসেছেন। তাহলে কেন আপনি ভাবছেন, আল্লাহ আপনাকে পরিত্যাগ করবেন? 

চরমভাবে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও বসে থাকবেন না। পুনরায় ওঠে দাঁড়ান। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনাকে একলা ছেড়ে দিতে এতদূর আনেননি। 

(এ ব্যাপারে) আস্থা রাখতে শিখুন যে, সবশেষে সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনার জীবনের যাবতীয় খুঁটিনাটি  বিষয়ের সমাধান করে দেবেন। তাই দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনার হৃদয়কে প্রশান্তিতে রাখুন। 

সর্বশক্তিমান আল্লাহ অন্যদের দূরে সরিয়ে আপনাকে একাকি ফেলে রাখেন, তার পেছনে কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। আল্লাহকে আপনার দুঃখ, দুশ্চিন্তা, ভয় ও আশার কথা বলুন। তিনি গুনছেন এবং সাড়াদানে প্রস্তুত আছেন। 

(হে) সর্বশক্তিমান আল্লাহ, যখন আমরা আশা হারাতে আরম্ভ করি কিংবা নিজেদের নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করি, তখন আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেবেন যে, আপনার পরিকল্পনা সর্বদাই আমাদের কল্পনার চেয়েও উওম হয়। 

দুঃখ কষ্টকে গজব নয়

যখন অনুভব করেন, আপনি চোখ মেলে আরেকটি দিনের মুখোমুখি হতে পারবেন না, তখন আপনাকে তুলে ধারার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। আল্লাহর শক্তিই শুধু আপনার প্রয়োজন। কেবল তাঁর কাছেই প্রার্থনা করুন। 

ক্ষণস্থ্যয়ী এই দুনিয়াতে আপনার ভোগ করা যাবতীয় দুঃখ-কষ্টের পুরস্কার যখন আপনি জান্নাতে দেখবেন, তখন আপনার ইচ্ছা হবে, (ইস!) ওই সময়গুলোতে যদি আরও বেশি দুঃখ-কষ্ট পেতেন। আমরা যা করতাম তার জন্য কি অপেক্ষা করছে, তা সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না। তাই সামনে এগিয়ে চলুন। 

আপনার কষ্ট ভিন্নভাবে দেখতে শিখুন। প্রতিটি দুর্ভাগ্য, প্রতিটি হতাশাকে নতুন এক আলোতে দেখুন। কষ্ট ও দুর্ভাগ্যের উদ্দেশ্য আপনাকে পরাস্ত করা নয়, বরং আপনাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকটবর্তী করা। আপনাকে উওম মানুষে পরিণত করতেই এগুলো এখানে। 

আমাদের সবারই সমস্যা রয়েছে, যা-র সুরাহা কখনো হবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। কেননা, এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। আমরা অনুভব করি আমাদের সীমাবদ্ধতা আমাদেরকে থমকে দিয়েছে। এমনটি সব সময়ই চলতে থাকবে, তা আমরা বিশ্বাস করতে আরম্ভ করি। জেনে রাখুন, আপনি হাল ছাড়লেও সর্বশক্তিমান আল্লাহ কখনো আপনার ব্যাপারে হাল ছাড়বেন না। 

যখন আপনি অনুভব করেন, কিছুই আপনার অনুকূলে যাচ্ছে না এবং একের পর এক পরীক্ষার মুখোমখি হচ্ছেন, তখন আপনার উচিত আশায় বুক বাঁধা। আল্লাহ আপনাকে (অবশ্যই) এসব পরিস্থিতি থেকে তুলে ধরবেন। 

হ্যাঁ, জীবন কঠিন। আমাদের ক্লান্ত আত্মা, নিঃশেষ হওয়া মন ও গভীর ক্ষত আমাদেরকে আল্লাহর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলিয়ে দেয়। নতি স্বীকার করবেন না, দৃঢ়তার সাথে সামনে এগিয়ে যান। 

আপনি যদি নিজের আশাকে মানুষের ওপর বা পরিস্থিতির ওপর সমর্পণ করেন, তবে খুব সম্ভবত আপনি নিরাশ হতে যাচ্ছেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট নিজের আশাকে সমর্পণ করুন। তিনি আপনাকে নিরাশ করবেন না। 

পরিস্থিতি কাজ করুক বা না করুক, তা আল্লাহর ইচ্ছা। সামনে এগিয়ে যেতে থাকুন। ফলাফল যাই হোক না কেন, তা-তে বরকত থাকবেই। তাই হাসি অব্যাহত রাখুন। 

যদি কখনো এই দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, তবে নিজেকে মনে করিয়ে দেন যে, এগুলো সব-ই ক্ষণস্থায়ী। কিছু্ই চিরস্থায়ী নয়। শুধু আখিরাতই চিরস্থায়ী এবং সেই আখিরাত আমাদের প্রতীক্ষায় আছে। 

এই জীবনে আপনি যে বিষয়ের প্রতিই মনোযোগী হন না কেন, মনে রাখবেন, আখিরাতের জীবনই সর্বাপেক্ষা উতম। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে সেখানে সবচেয়ে চমৎকার জিন্দেগি দান করুন। 

আপনি মনে করছেন কিছুই ঠিকঠাক চলছে না। আপনি বিলম্ব এবং বদ্ধ দরজা দেখছেন। যদি সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করেন, আল্লাহ আপনার জন্য (উওম কিছু) জমা রেখেছেন, তবে আপনি নিজেকে অবশ্যই নিচ থেকে ওপর তুলে আনবেন। 

যখন কিছু হারান, তখন দুঃখিত হবেন না। আল্লাহ একদিন কোনো না কোনোভাবে আপনার ওই ক্ষতি পূরণ করে দেবেন এবং আপনি যে ভালো কাজ করেন, আপনাকে তিনি তা-র পুরস্কারও দেবেন। 

আপনি কি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, একদিন তার কিছুই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে না। যেদিন সবকিছু থেমে যাবে, সেদিন কিভাবে আপনি জীবন অতিবাহিত করেছেন, তা-ই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে । তাই  বৃদ্ধকালে পৌছালে ভালো কাজ করবেন, দয়ালু হবেন এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করবেন, তার জন্য অপেক্ষা করবেন না। কালক্ষেপণ করবেন না। বরং এখনই করুন।

জীবনের পথে পরিত্রুমায় কিছু জিনিস (আপনার কাছে) বোধগম্য হবে না, কিন্তু তা স্বাভাবিক । সর্বশক্তিমান আল্লাহ যদি তা থেকে কোনো ভালো বের করে না আনেন, তবে তিনি এমনটি হতে দিতেন না, এটা জেনে আশ্বস্ত হন। এ নিয়ে দ্বিধায় ভুগবেন না। স্বাভাবিকভাবেই আপনার সর্বোত্তম স্বার্থ তাঁর কাছেই আছে। 

সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আমাদের প্রত্যেকেরই গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের কে ভালো, কে মন্দ এবং কে কুৎসিত, সর্বোপরি আমাদের সম্পর্কে জানার সবটুকুই তিনি জানেন। (কেননা), তিনিই আমাদেরকে ‍সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের তত্ত্বাবধান করেন। আমাদের কল্পানানার চেয়েও তিনি আমাদেকে বেশি ভালোবাসেন। গোটা দুনিয়া হয়তো আমাদের বিপক্ষে চলে যেতে পারে, কিন্তু তিনি (সর্বদা) আমাদের পাশেই থাকবেন।

আপনি ভাবছেন ‍পরিস্থিতি হয়তো ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি অধিকতর ভালো হচ্ছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষা করছেনে এবং তিনি আপনাকে (উওরণের) পথও করে বাতালে দেবেন। 

আপনার মুখোমুখি হওয়া প্রতিটি কষ্ট দৃষ্টিকর্তা আপনার জন্য বিশেষভাবে বানিয়ে রেখেছেন। কষ্ট আপনার জন্য তাঁর (অর্থ্যৎ আল্লাহর) নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ। তিনি জানেন আপনি কষ্ট মোকাবিলা করতে পারবেন। 

আমাদের সবারই নানা সমস্যা ও ইস্যু রয়েছে। আমরা কেউই নিখুঁত নই। যতক্ষণ আমরা গতকালের চেয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টায় রত থাকি, ততক্ষণ তা-ই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

যখন আমরা দুর্বল বা হতবিহ্বলতা অনুভব করি, (আসুন) তখন আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। কিছুই তাঁর জন্য বোঝাতুল্য নয়। তিনিই সবকিছুর পূর্ণনিয়ন্ত্রক। তিনি আমাদের সর্বময় অভিভাবক। 

অন্তরকে প্রশান্ত রাখুন। অন্তরকে আল্লাহর সাথে আবদ্ধ রাখুন। সমস্ত কোলাহল উপেক্ষা করুন। যেদিন আপনি জান্নাতের মধ্য দিয়ে হাঁটবেন, সেদিন আপনার সমস্ত কষ্ট (আপনার নিকট) বোধগম্য হবে। 

জীবনে সর্বদাই উত্থান ও পতন থাকবে, থাকবে ভালো ও মন্দ সময়। এগুলো থেকে শিখুন। আমরা কতটা  কৃতজ্ঞ, আল্লাহকে তা দেখানোর জন্য প্রতিটি নতুন দিনই একটি নতুন সুযোগ। 

আপনার কষ্ট স্থায়ী হবে না। আজ কষ্ট থাকলেও আগামীকাল তা বিদায় নেবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ধৈর্য ধারণ করুন। ধৈর্যের সমাপ্তি সুন্দর। 

মৃত্যুর মাধ্যমে পরিবারের কোনো সদস্যকে হারানো সম্ভবত সর্বশক্তিমান আল্লাহর দেওয়া কঠিনতম পরীক্ষা একটি। কিন্তু জেনে রাখুন, শোককে লাঘব করার শাক্তি মাহান আল্লাহর রয়েছে। 

ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা যেন আপনাকে গ্রাস না করে। দুশ্চিন্তা যখনই আপনার মনে প্রবেশ করে, তখনই তা ছুড়ে ফেলুন। আপনার জন্য যা উওম, তা আপনার দেওয়ার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন। তাঁর প্রতি আস্থা রাখৃুন। 

আমরা পরিকল্পনা করি। সর্বশক্তিমান আল্লাহও পরিকল্পনা করেন। আমাদের পরিকল্পনা যখন কাজ করে না, তখন আশা হারানো এবং হাল ছেড়ে দেওয়া সহজ। কিন্তু তা করবেন না। তিনি আমাদের জন্য উওম জিনিস প্রস্তুত করে রেখেছেন। তাঁকে ভরসা করুন। 

 বিপদ আপনার কঠিন হওয়ার রাস্তা

যখন আপনি দিশেহারা, তখন ‍উদ্দেশ্যহীনভাবে একদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানোর পরিবর্তে নিজেকে (এ কথা) স্মরণ করিয়ে দেন। যে, জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই (দিশেহারা) অনুভূতি স্থায়ী হবে না। (পরিস্থিতি) সহজ করে দেওয়ার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। 

জীবন যখন কোনো তাৎপর্য বহন করে না এবং যখন আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের মুখোমুখি, প্রকৃতপক্ষে তখনই আপনার ঈমান পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, এটা যাচাই করতে যে, আপনি কি ভেঙ্গে পড়েন না অবিচল থাকেন। 

সময় যখন কঠিন, তখন হাল ছেড়ে দেওয়াটাই সবচেয়ে সহজ। সবাই যখন আপনার কাছে থেকে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রত্যাশা  করে, তখন লেগে থাকটাই সত্যিকারের শক্তি। 

জীবনে যত ঝড়ের মুখোমুখি হবেন, আপনি ততই শক্তিমান হবেন। জীবে এভাবেই কাজ করে। তাই অন্ধকারে আচ্ছন্ন হলেও হাল ছেড়ে দেবেন না। প্রভাতের আলো নিশ্চিতভাবে ফুটবেই। 

সবশক্তিমান আল্লাহ সবকিছুর মালিক। অনুগ্রহ করা থেকে তিনি কখনো ফুরিয়ে যান না। তাঁর সম্পদ সীমাহীন। বাস্তবতা হচ্ছে: তিনি কাউকে যখন অবারিতভাবে দান করেন, তখন তা তাঁকে অন্যদের ক্ষেত্রেও তেমনটি করতে বাধাগ্রস্থ করে না।

হোঁচট খাওয়া, আশা হারানো এবং পরীক্ষা মাঝে অধৈর্য হয়ে পড়া আমাদের জন্য স্বাভাবিক। তথাপি আমরা যদি এই বিষয়টি স্মরণ রাখি যে, সবকিছু তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে, তখন আমরা তাঁর লুকানো সব রহমত দেখতে পাবো। 

আপনি আপনার জীবনের পেছনে ফিরে যেতে পারবেন না। তাই তেদিকে তাকাবেন না। সামনে এগিয়ে চলুন। আজকের দিনের প্রতি মনোযোগ দেন। ঠিক এই মুহূর্ত থেকে আপনি যা করেন, তা-ই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপুর্ণ।

বিপর্যয়ের রয়েছে তার (নিজস্ব) আশীর্বাদ। তা-কে আলিঙ্গন করুন। সর্বশক্তিমান আল্লাহ সবকিছু জানেন। বিপর্যয় কিভাবে একজন কর্কশ-রূঢ় ব্যক্তিকে হৃদয়বান-কোমল ব্যক্তিতে পরিণত করতে পারে, তিনি তা (ভালোভাবেই) জানেন। 

সর্বশক্তিমান আল্লাহ, আমাদেরকে শক্তি দেন এবং এই মুহূর্তে আমরা যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে, যাচ্ছি, সেগুলো মোকাবিলার ক্ষমতা আমাদেরকে দেন। যা কিছুই ঘটুক না কেন, আমাদের অন্তরকে আপনি আশা দিয়ে পূর্ণ করুন। 

আপনার ঈমানের কারণে যদি কোনো বন্ধ আপনার থেকে দূরে সরে যায়, তবে হতাশ হবেন না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এমন কাউকে দিয়ে তাকে বদলে দেবেন, যে তার থেকেও উওম। তাই অবিচল থাকুন। 

আপনি (নিজেকে শত) মিলিয়ন টুকরোতে চূর্ণবিচূর্ণ ভাবতে পারেন এবং কোনো আশা নেই, এমনটি মানে করতে পারেন, তথাপি আপনার উচিত সর্বশক্তিমান আল্লাহর তৈরি করা পরিকল্পনার ওপর আস্থা রাখা। তাঁকে অবমাননা করবেন ন। (কেবল) তিনিই পারেন আপনার সমস্যার সমাধান দিতে। 

আপনার জীবনযে পাল্টে যেতে পারে, এ ব্যাপারে আপনি কি কখনো আশা হারিয়েছেন? দুনিয়ার প্রবন্ধনাময় প্রতিশ্রুতি দ্বারা ঝাঁকুনি খাওয়ার পরিবর্তে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহমুখী হন। 

আপনি ভাবছেন, আঘাতকে আপনি মুছতে সক্ষম নন। কিন্তু আপনি ভুলে যাচ্ছেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা মুছতে পারেন এবং তার চেয়েও বেশি পারেন। আপনার অর্জিত অভিজ্ঞতার চেয়েও তিনি আপনাকে (মানসিকভাবে) আরও শক্তিশালী বানাবেন। 

জীবন যত কর্মব্যস্ত হয়, ততই আপনি অনুভব করতে থাকেন যে, আপনার জীবনের কিছু একটা ঠিক নেই। আপনি অস্থির এ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। (এসবের) প্রতিকারের জন্য আপন স্রষ্টার দিকে নিজের অন্তরকে নিবদ্ধ করুন। 

আপনি যেরূপ, সর্বশক্তিমান আল্লাহ একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখেই আপনাকে সেরূপ বানিয়েছেন। এটা কোনো দৈবাৎ ঘটনা নয়। তিনি আপনাকে কখনো উপেক্ষা করবেন না, আর না পরিত্যাগ করবেন। তাই তাঁকে ধন্যবাদ দেন। 

সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেমনিভাবে আমাদের জন্য দরজা উন্মুক্ত করেন, ঠিক তেমনিভাবে তিনি সেগুলো বন্ধও করেন। তিনি যদি তেমনটি করে থাকেন, তবে তার মর্ম হচ্ছে: এর থেকেও উওম কিছু অপেক্ষা করছে। (আল্লাহর এসব) নিদর্শন অনুধাবন করুন। 

ভালোবাসা সর্বদাই ঘৃণার উপর জয় লাভ করবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার-ই বন্দোবস্ত করবেন। তাই দুশ্চিন্তা করবেন না। অনেক কিছুই এখন হয়তো বোধাগম্য নাও লাগতে পারে, তথাপি আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখুন, যেহেতু তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ পাবেই। 

সামনে এগিয়ে যেতে থাকুন। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার চাবি কেরল সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। বরং এটা তো ওই ব্যাক্তির জন্য, যিনি বলতে পারেন, “আমি নতি স্বীকার করবে না। কেননা, জান্নাতই এর উপযুক্ত প্রতিদান।” 

জীবনে যা ঘটে, তার সবই আপনি বুঝবেন না। এমনটি স্বাভাবিক। সর্বশক্তিমান আল্লাহর একটি পরিকল্পনার রয়েছে। এগুলো থেকে কিভাবে ভালোটাকে বের করে আনতে হয়, তিনি তা (ভালো করেই ) জানেন। তাই সামনে এগুলো থাকুন। 

অসুস্থতাকে হতাশার উৎস বিবেচনা করবেন না। রহমত ও আরোগ্য লাভের জন্য অসুস্থতাকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের একটি মাধম হিসেবে কাজে লাগান। সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেন অসুস্থকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করেন। 

কিছুই স্থায়ী নয়, বিশেষভাবে মানুষ তো নয়ই। তারা আসে আবার চলে যায়। নিজের আকাঙ্ক্ষারে আকাশচুম্বী করবেন না। আপনার জীবনকে অন্যের ওপর নির্ভর করে গড়ে তুলবেন না। এসব আল্লাহর পরিকল্পনারই একটা অংশ। 

আশা নিয়ে বেঁচে থাকা খারাপ কিছু নয়

নিজের আশাকে আপনি যদি মানুষের ওপর বা পরিস্থিতির ওপর স্থাপন করেন, তবে খুব সম্ভবত আপনি নিরাশ হতে যাচ্ছেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট নিজের আশাকে সমর্পণ করুন। তিনি আপনাকে নিরাশ করবেন না। 

শয়তান আপনার মনকে যে চিন্তা দিয়েই আচ্ছন্ন করুক না কেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনাকে পরিত্যাগ করেননি। তিনি আপনাকে এমনভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন, যা আপনার উপলব্ধির বাহিরে। 

দুর্ভোগ ও কঠিন পরিস্থিতির মাঝে থেকেও আপনি কারো জন্য আশার আলো হতে পারেন। এবিষয়কে কখনো সন্দেহ করবেন না। ক্ষুধার্তের জন্য বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত, একমুখ হাসি ও খাবার। (এতে করে) আপনি তাদের (পরম) বিস্ময়ে পরিণত হতে পারেন। 

আমাদের সবারই উত্থান ও পতন রয়েছে; এমনও দিন যায় যখন আমরা অন্যের থেকে বেশি সংগ্রাম করি। জেনে রাখুন, সর্বশক্তিমান আল্লাহ অবগত আছেন এবং তিনি কখনোই আমাদের প্রচেষ্টাগুলোকে বিফলে দেবেন না। 

ক্ষত সেরে যাবে, ঘৃণা রূপান্তুরিত হবে ভালোবাসায়। সবই অতিক্রান্ত হবে। তাই ধের্য ধরুন। দুশ্চিন্তা করবেন না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তো আমাদেরকে বলেই দিয়েছেন যে, কিছুই চিরস্থায় নয়।

জীবনে আপনি অন্যদের দ্বারা উপেক্ষিত হতে পারেন, চাকুরিতে পদোন্নতি নাও পেতে পারেন কিংবা কারোর দ্বারা আপনি বাজে ব্যবহার বা অবজ্ঞার শিকারও হতে পারেন। দুশ্চিন্তা করবেন না। যখন আপনি মানুষের সাথে লেনদেন করুন, তখন এগুলো ঘটে। তথাপি জেনে রাখুন, সর্বশক্তিমান আল্লাহ কখনোই আপনাকে উপেক্ষা করবেন না। 

আপনি হয়তো আপনার গুরুতর পরিস্তিতি থেকে উওরণের কোনো পথ দেখছেন না, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর হাতে (উওরণের) কোনো পথ (অবশিষ্ট) নেই। সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত সময় (কখন আসবে, তা) তিনিই ভালো জানেন।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ যদি আপনার জীবনে প্রথম স্থানে  থাকেন, তবে আপনার অন্তরে অন্যরা কি জায়গা পেলো , তা নিয়ে আপনাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। সবকিছু তার উপযুক্ত স্থানে পতিত হবে  এবং আপনার অন্তর হবে পরিতৃপ্ত । শেষ অবধি  এটাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

No comments

Theme images by caracterdesign. Powered by Blogger.